দেবরীনা মণ্ডল সাহা, কলকাতা :- মেট্রো রেলের কাজ চলাকালীন ফের ফাটল বউ বাজারে একাধিক বাড়িতে। বাড়িতে ফাটল ধরায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন বাসিন্দারা। শুক্রবার ভোরে দুর্গা পিতুরি লেনের পাশের গলি মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরে।তারপরই মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে এসে তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েন মেট্রোর আধিকারিকরা। তাঁদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়নি। আপাতত ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুক্রবার ভোরের দিকে মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। আতঙ্কিত হয়ে তাঁরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। এক মহিলা বলেন,’আমি অসুস্থ। ভোর ৪ টা ৫০ মিনিট নাগাদ বাথরুমে গিয়েছিলাম। মেঝেতে দেখছি ফাটল ধরা পড়ছে। আমি দৌড়ে এলাম। বাকিরাও বলছিল যে দিদি ফাটল ধরেছে। বেরিয়ে এস। তারপর থেকে মেট্রোর লোকেদের জানানোর চেষ্টা করছি আমরা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’কেএমআরসিএলের কাজের জন্য ফাটল বলে অভিযোগ। সকালে জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে অসহায় বাসিন্দারা। মেট্রো রেলের কাজের কারণেই বউবাজারের ১০টি বাড়িতে ধরল ফাটল। তবে বারবার ফাটল কেন? প্রশ্ন ক্ষতিগ্রস্তদের। এই কারণে প্রায় দুশোজন বাসিন্দাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে নির্মাণকারী সংস্থা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের (কেএমআরসিএল) তরফে জানানো হয়েছে, শিয়ালদার অভিমুখে মেট্রো লাইনে ক্রস প্যাসেজে কাজ চলছিল। রাত তিনটে নাগাদ জল বের হতে দেখা যায়।মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দেও। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসে বিশ্বরূপ অভিযোগ করেন, একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরলেও মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে গড়িমসি করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মেট্রোর কোনও প্রতিনিধিও আসেননি। পরে যাঁদের পাঠানো হয়েছে, তাঁরা বিশেষজ্ঞ নন, আদতে মেট্রোর আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বড্ড ভয়ানক, মেট্রো কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতি, এটা নিয়ে তৃতীয়বার হল। ২০১৯ সালে হয়েছিল। ১১ মে হয়েছিল। ফের আজ ভোররাতে হয়েছে। এই মানুষগুলো সব এখানে ঘোরাঘুরি করছেন।’উল্লেখ্য এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট বউবাজারের বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, বউবাজার স্ট্রিট, দুর্গা পিতুরি লেনের একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরেছিল। ঘরছাড়া হয়েছিলেন বাসিন্দারা। ফের সেই স্মৃতি ফিরে এলো। নির্মাণ সংস্থা কেএমআরসিএল এই ঘটনা নিয়ে জানিয়েছে, মেট্রোর লাইনে ক্রস প্যাসেজে কাজ চলাকালীন সেখান থেকে জল বার হতে দেখেনে কর্মরত কর্মীরা৷ উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। যে বাড়িগুলিতে ফাটল ধরেছে সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার কাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জেরে আর কত বার এইভাবে নিজের বাড়ি ছেড়ে সরে যেতে হবে অন্যত্র? সেই প্রশ্ন তুলছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা।