প্রসেনজিৎ ধর, কলকাতা :-তার নামের পাশে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিগ্রি। হতে পারতেন ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু সে সবকিছুর তোয়াক্কা না করে হয়ে গেলেন অ্যাপ ক্যাবের চালক| তিনি দীপ্তা ঘোষ,কলকাতার বাঁশদ্রোণির বাসিন্দা | ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে সোজা ড্রাইভারি। ভাল চাকরি নিয়ে বাংলার বাইরে কাজ করাই যেত। কিন্তু মায়ের একাকিত্ব, ছোট বোনের লেখাপড়া দেখবে কে? বড় মেয়ে হিসাবে মৃত বাবার অপূর্ণ কাজ তো তাঁকেই করতে হবে! তাই চাকরির চেষ্টা ছেড়ে অ্যাপ ক্যাবের স্টিয়ারিং ধরেছেন দীপ্তা। রাস্তায় কখনও ‘ডব্লু বি ০৫-৮১৯৮’ ক্যাব দেখলে জানবেন, চালকের আসনে বসে আছেন জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী দীপ্তা ঘোষ।বাবার মৃত্যুর পর মাকে নিয়ে ভিন রাজ্যে চাকরিতে যেতে চাননি তিনি। বোনকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। এখন কলকাতার রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন স্টিয়ারিং হাতে। দীপ্তার প্রেরণা, তাঁর মা পদ্মশ্রী ঘোষ। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কলকাতায় চাকরি পেলেও সেখানে বদলি হতে পারে। তাই সে পথে যাননি। স্বাধীনভাবে কিছু করতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকেই অ্যাপ ক্যাব চালানোর ভাবনা মাথায় আসে। ২০২২ সালে এই পেশায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সালে তাঁর বাবার আকস্মিক মৃত্যু হয়।দীপ্তা কলকাতার জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পলিটেকনিক কলেজেরও ছাত্রী। ২০১৬ সালে তিনি গ্রাজুয়েশন করেন। বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন। এরপর ২০২১ সালে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পান। তাঁর মায়ের পরামর্শে একটি ক্যাব কেনেন তিনি। সেখান থেকে এখন মাসে ৩৫থেকে৪০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। লেখাপড়া শেষে কিছু দিন চাকরি করে কিছু টাকা জমাতে পেরেছিলেন দীপ্তা। নিজের জমানো টাকা দিয়েছিলেন তাঁর মা পদ্মশ্রী ঘোষ। দীপ্তা কিনে ফেলেন একটা সাদা রঙের গাড়ি। যার ‘সারথি’ তিনি নিজে। অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী পাওয়া কঠিন নয়। ফলে মাসের শেষে তেল আর গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচা সামলেও ভাল আয়। মা-মেয়ের জীবন এখন বেশ আনন্দের। দীপ্তার বোন আগেই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। বিয়েও হয়ে গিয়েছে।
দীপ্তার কথায়, ‘‘কলকাতায় মেয়ে ক্যাবচালক খুবই কম। নেই বললেই চলে। সকলের মা তো আমার মায়ের মতো নন! আমার মনে হয়, মায়েরা সাহস না দিলে, পাশে না থাকলে কোনও মেয়ের পক্ষে ‘পুরুষের কাজ’ হিসাবে পরিচিত ক্যাবচালক হওয়া সহজ নয়।’’ ক্যাব চালাতে গিয়ে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতেই হয়। তবে যাত্রীদের নিয়ে তেমন অখুশি নন দীপ্তা। যদিও তাঁর দাবি, ‘‘পুরুষ যাত্রীরা প্রায় সবাই ভাল ব্যবহার করেন। যেটুকু খারাপ ব্যবহারের মুখোমুখি হতে হয়, সেটা মূলত মহিলা যাত্রীদের থেকে। তবে সেই সংখ্যাও খুব বেশি নয়।’’