প্রসেনজিৎ ধর, কলকাতা :- যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় শঙ্কিত পড়ুয়াদের অভিভাবকরা । পড়ুয়ার মৃত্যুর পর ইতিমধ্যেই পুলিশের বেড়াজালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু প্রাক্তনী এবং পড়ুয়া। তবে এই প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুকে ঘিরে উঠেছে র্যাগিংয়ের মতো অভিযোগ। অনেকেই আশঙ্কাপ্রকাশ করছেন, ব়্যাগিংয়ের জেরেই মৃত্যু হয়েছে ওই পড়ুয়ার ৷ আর সেই ভয় এবার দেখা যাচ্ছে প্রথম বর্ষের বেশ কিছু পড়ুয়া আর তাদের অভিভাবকদের মনেও।যাদবপুর থানার পাশে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন ছাত্রাবাসে থাকার খরচ মাসে মাত্র ২৫ টাকা। এ ছাড়া, খাওয়ার জন্য খরচ হয় ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। পড়ুয়াদের মতে, এত সস্তায় কার্যত আর কোথাও থাকা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে মেসে থাকলে তার ভাড়াই ২৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা। সঙ্গে খাওয়ার খরচ আলাদা। আর পেয়িং গেস্ট থাকতে হলে খাওয়া ও থাকা মিলিয়ে খরচ পড়ে যায় ছ’হাজার টাকার মতো। এই খরচের তফাত তুলনা করে তাঁর ছেলের জন্য প্রথমে হস্টেল পেতেই মরিয়া হয়েছিলেন এক অভিভাবক অর্ণব সাহা। কিন্তু যাদবপুরে ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনার পরে তিনিই এখন অন্য রকম ভাবছেন। বীরভূমের বাসিন্দা অর্ণব বলেন, ‘‘ছেলেকে হস্টেলে রাখার কথা আর ভাবছি না। মেসে থাকলে খরচ বেশি হবে। তা মেনে নিয়েই আশপাশে মেসে বা পেয়িং গেস্ট হিসাবে ছেলেকে রাখার কথাই ভাবছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে একটা মেস খুঁজেও পেয়েছি। প্রতি মাসে খরচ ৩৫০০ টাকা। খাওয়ার খরচ আলাদা।’’কম্পারেটিভ লিটারেচার নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে এক ছাত্রী। তার বাড়ি ব্যারাকপুরে। প্রতিদিন সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মায়ের সঙ্গে আসে। আবার ক্লাস শেষে সে বাড়ি ফিরে যায় বিকাল পাঁচটায়। মেয়ে ক্লাসে থাকলেও প্রায় ছয় ঘণ্টা ক্যাম্পাসেই ঠায় বসে থাকেন ছাত্রীর মা ৷ সারাদিনই প্রায় তাঁর কেটে যায় সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসের দিকে তাকিয়ে। তবে যে নির্মম হত্যার ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে তাতে এখনও আতঙ্কিত ভাস্বতী দেবী । তিনি বলেন, “এই ঘটনা না-ঘটলে হয়তো মেয়েকে একাই ছেড়ে দিতাম। কিন্তু এই ঘটনায় আমার বেশ ভয় লাগছে। তাই রোজ আমি ওকে সঙ্গে করে নিয়ে আসি ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে থাকি আবার ক্লাস শেষ হলে ওকে সঙ্গে নিয়েই ফিরে যাই ।”একটি মেসের মালিক রাতুল দাস বলেন, ‘‘অভিভাবকদের মেসের প্রতি যা ঝোঁক দেখছি, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে আমার মেসের ফোন নম্বর দিয়ে আরও কিছু পোস্টার সাঁটিয়েছি। অনেকেই ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন।’’ গত দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পেয়িং গেস্ট হিসাবে রাখছেন রীতা দাস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাঁটাপথে তাঁর বাড়ি। রীতা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে যিনি পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকেন, তিনি কোনও বাইরের লোককে এনে এখানে রাখতে পারবেন না। রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘরে ঢুকতে হবে। ঘরে বন্ধুদের নিয়ে পানাহারের আসর বসানো যাবে না। এই সব আগেই অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়া হয়। কেউ নিয়ম না মানলে অভিভাবককে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়।’’