দেবরীনা মণ্ডল সাহা,কলকাতা :- ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে উত্তর সিকিম। বুধবার ভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে লোনক হ্রদ ফেটে হুড়মুড়িয়ে জল নেমে আসে তিস্তায়। আচমকাই হড়পা বান আসায় তিস্তার জলস্তর বেড়ে যায়। আর তাতেই ভেসে নিখোঁজ হয়ে যান সেনার ২৩ জওয়ান। সিকিম ও বাংলার দার্জিলিং পেরিয়ে তিস্তা জলপাইগুড়ি জেলায় সমতলে প্রবেশ করছে। ফলে চরম আতঙ্কে দিন কাটছে উত্তরবঙ্গবাসীর। উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তিস্তার জল ক্রমশ এগিয়ে আসছে উত্তরবঙ্গ জেলাগুলির দিকে। এই পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে বার্তা দেন | তিনি লেখেন’সিকিমে আকস্মিক মেঘ ভাঙা বৃষ্টিরপর বন্যায় ২৩ জন সেনা নিখোঁজ হওয়ার খবরে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই বিষয়ে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সমবেদনা প্রকাশ এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময়, আমি উত্তরবঙ্গের সকলকে বর্তমান মরসুমে বিপর্যয় মোকাবিলায় সর্বাধিক সতর্কতা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করছি। ইতিমধ্যেই আমার মুখ্য সচিবকে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার প্রস্তুতি করতে বলেছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমন্বয় করতে বলেছি। কালিম্পং, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রাজ্যের সিনিয়র মন্ত্রী এবং সিনিয়র আইএএস অফিসারদের উদ্ধার ও ত্রাণ তদারকির জন্য উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়েছে। এই ভয়াবহ দুর্যোগে যাতে প্রাণহানি না হয় সেজন্য কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।’মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার জন্য। যাতে উদ্ধারকাজে রাজ্যের তরফে সমস্ত রকম সহায়তা করা যায়। তিস্তা সিকিম থেকে নেমে এসেছে উত্তরবঙ্গে। সেখানে যাতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে না যায় সে জন্যও প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কালিম্পং, দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির নীচু এলাকা থেকে মানুষকে সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে নবান্নের তরফ থেকে।উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দক্ষিণ বঙ্গের ক্ষেত্রে ডিভিসির জল ছাড়া হয়েছে। ডিভিসি বলেছে জল না ছাড়লে ব্রাস্ট হয়ে যাবে। ১ লক্ষ ৭০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। উদয়নারায়নপুর, খানাকুল-সহ বেশ কিছু অঞ্চল প্লাবিত। পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ বেশ কিছু অঞ্চল কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে জলমগ্ন অবস্থায়। ন্যাশনাল ডিজিস্টারকে অ্যালার্ট করা হয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘আমি পায়ের চোটের জন্য বেরোতে পারছি না। তবে রাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রী এবং প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়োগ করেছি। তাঁরা বন্যা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। মেদিনীপুর, সবং এবং ঘাটালের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু’টি কন্ট্রোল রুম খোলারও নির্দেশ দিয়েছি।’’ এর পরেই মুখ্য সচিব দ্বিবেদীর উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘তোমরা কন্ট্রোল রুমের নম্বর দ্রুত জানিয়ে দাও। যাতে অসুবিধায় পড়লে মানুষ সমস্যার কথা জানাতে পারেন। আর একটা নম্বর আমার কাছেও দিও। আমি বাড়ি ২৪X৭ জরুরি পরিস্থিতির সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কাজ চালাবো। আপাতত সবার ছুটি বাতিল। কারণ পুজোর মুখে এমন একটা বিপর্যয় আগে সামলানো দরকার।’’