দেবরীনা মণ্ডল সাহা :- বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে সাত জেলায়। আর তাই ছুটির দিনেও নবান্নে হয়ে গেল জরুরি বৈঠক। একদিকে নিম্নচাপের টানা বৃষ্টি, সঙ্গে ডিভিসির জলাধারগুলি জল ছাড়া শুরু করেছে। আগামী কয়েক ঘণ্টায় আরও জল ছাড়া হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। সাত জেলার নীচু এলাকা থেকে মানুষজনের সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নবান্নের তরফে।অতিভারী বৃষ্টির জেরে ডিভিসি’র ড্যাম্পে জল ধরে রাখার মাত্রা কমেছে। তাই অবশেষে ডিভিসি’র মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে ছাড়া হল জল। মাইথন থেকে গতকাল রাতে প্রায় ৩০ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে প্রায় ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। মাইথনে মোট পাঁচটি লক গেট খোলা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে ইতিমধ্যে সুন্দরবনে সব ব্লকে মাইকিং করে সতর্কতামূলক প্রচার শুরু হয়েছে। জেলার প্রতিটি ব্লক অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন উপকূলের কাঁচাবাড়ির বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার চালান হচ্ছে।এই পরিস্থিতির মধ্যে বৃষ্টি হলেই ডুলুং নদীতে জল বাড়ে। যার ফলে চিল্কিগড়ে ওই নদীর উপর থাকা কজওয়েটি জলে ডুবে যায়। যার ফলে জামবনি ব্লকের সঙ্গে ঝাড়গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি চিল্কিগড়ে ডুলুং নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও এখনও সেতু নির্মাণ হয়নি বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই ডিভিসি সংলগ্ন জেলাগুলিতে সর্তকতা জারি করা হয়েছে। জল ছাড়ায় একাধিক এলাকা বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নবান্ন সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ড থেকে জল ছাড়ার মাত্রা বাড়ছে। আর ডিভিসি তাদের একাধিক জলাধার থেকে জল ছাড়ছে। তাই জেলাগুলিতে জলস্তর বাড়ছে।ডিভিসি-র জল ছাড়ার ফলে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া-সহ সাত জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা। এই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে ডিভিসির জলাধারগুলি থেকে আরও জল ছাড়া হতে পারে মনে করা হচ্ছে। প্লাবিত এলাকা থেকে যাতে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, আগের দিনের বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল| আরও জল ছাড়ার ফলে কী হতে পারে তার মোকাবিলা করতেই এদিন ফের বৈঠক করা হয়।নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাইকিং করা থেকে ত্রাণ এবং উদ্ধারের ব্যবস্থা করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫ ঘণ্টা অন্তর জেলাগুলিকে রিপোর্ট দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীর পর্যাপ্ত মজুত-সহ অন্যান্য বন্যা-প্রতিরোধী উপকরণ, যেমন বালির ব্যাগ ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে মজুত রাখতে বলা হয়েছে। উপযুক্ত আলো, ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। কোনও এলাকায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি বৃষ্টিপাত হলে জেলাগুলিকে জানাতে হবে, সে বিষয়েও নবান্নের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা তথ্য শেয়ার করতে বলা হয়েছে।