দেবরীনা মণ্ডল সাহা, কলকাতা :- ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের তদন্তে এ বার লুক আউট নোটিস জারি করতে চাইছে লালবাজার। সূত্রের খবর, এই চক্রের সদস্যেরা গত কয়েক বছরে বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতীয় বলে দেখিয়ে ১২১টি পাসপোর্ট তৈরি করেছিল। যার মধ্যে ৭০টিরও বেশি পাসপোর্ট দেওয়া হয়ে গিয়েছিল আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের তরফে। বাকি প্রায় ৫০টি পাসপোর্ট তৈরির অপেক্ষায় ছিল, যা ইতিমধ্যে আটকে দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ। এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে এসেছে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের রমরমা। একজনকে গ্রেপ্তার করতেই হদিশ মিলেছে একাধিক অভিযুক্তের। রহস্যভেদে মরিয়া পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা ছিল, এই জালিয়াতির নেপথ্যে থাকতে পারেন পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের ভেরিফাইং এবং গ্রান্টিং অফিসারদের একাংশ। সেই কারণে আগেই চিঠি দিয়ে রাজ্যের পাঁচ পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের ভেরিফাইং অফিসার ও গ্রান্টিং অফিসারদের নামের তালিকা চেয়েছিল লালবাজার। পরবর্তীতে স্ক্যানারে আসে দুই ডিভিশনের পাঁচ থানার ভেরিফিকেশন অফিসাররা অর্থাৎ ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা।পুলিশ সূত্রে খবর, পাসপোর্ট জালিয়াতিতে ব্যবহার করা হয়েছে ভাড়া করা অ্যাকাউন্ট। ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, যারা সীমান্ত এলাকার এজেন্ট বা সাব এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন তাঁদের অ্যাকাউন্টও ব্যবহার করা হত। এক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ১০টিরও বেশি পাসপোর্টের পেমেন্ট করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এর বিনিময়ে এজেন্টদের দেওয়া হত কমিশনও। এখানেই শেষ নয়, ভুয়ো নথি ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও তৈরি করা হয়েছে বলে খবর। কত গভীরে এই দুর্নীতির শিকড়, তা জানার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দারা মনে করছেন, ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের সদস্যেরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে আবেদনের জন্য ওই টাকা পাঠিয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, পাসপোর্টের আবেদনে ইমেল আইডি দিতে হয়। সেই ইমেল আইডিগুলি কারা বানিয়েছে, তা-ও জানার চেষ্টা শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। বর্তমানে ওই চক্রের আট জন সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। তার মধ্যে এক জনের জামিন মিলেছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, আরপিও অফিসের কেউ বা কারা এর সঙ্গে যুক্ত থাকতেও পারেন। তাই আরপিও-র কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। লালবাজার জানিয়েছে, পুলিশের পাসপোর্ট অফিসারের কয়েক জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাসপোর্টের নথি যাচাইয়ের সময়ে কোনও অনিয়ম তাঁরা করেছেন কি না, দেখা হচ্ছে মূলত সেটাই।