প্রসেনজিৎ ধর, কলকাতা :- গ্রুপ–সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বাগদার রঞ্জন ওরফে চন্দন মণ্ডলকে। তার সঙ্গে এবার মিডলম্যান প্রসন্ন রায়ের যোগসূত্র পেল সিবিআই। সিবিআই –এর দাবি, চন্দন মণ্ডলের টাকা প্রসন্ন রায়ের মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে যেত। এমনকী চন্দনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঢুকত মিডলম্যান প্রসন্ন রায়ের অ্যাকাউন্টে। এখনও পর্যন্ত ২২টি অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে বলে নজরে এসেছে। মাঝে মধ্যে হাতে হাতেও পৌঁছে দেওয়া হতো বিপুল নগদ টাকা।সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস উল্লেখ করেছিলেন ‘সৎ রঞ্জনে’র নাম। তারই ভিত্তিতে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে শুরু করে আরও কয়েকটি জেলায় খোঁজখবর নিতে শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা। গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, কয়েকজন প্রভাবশালীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকার সুবাদে চন্দন মণ্ডল স্কুলদপ্তরে নিয়োগের নাম করে টাকা তুলতে শুরু করেন। সিবিআইয়ের ভাষায়, উচ্চপর্যায়ের এজেন্ট ছিলেন চন্দন। তাঁর আওতায় অজস্র সাব এজেন্ট কাজ করতেন। ওই সাব এজেন্টদের মাধ্যমেই বিভিন্ন জেলার চাকরিপ্রার্থীদের বলা হত যে, টাকা দিলেই মিলবে চাকরি। শুধু ওএমআর শিটের উপর নাম লিখেই জমা দিলে হবে। বিশেষ কয়েকটি প্রশ্নে কালি দিয়ে ফাঁকা জায়গা ভরাট করতে হবে। তাতেই ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থী, যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁদেরও শনাক্ত করা যাবে। এই ধরনের একের পর এক তথ্য হাতে আসার পরই রঞ্জনকে তলব করা হয় নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের দপ্তরে।এদিকে শুক্রবার চন্দন মণ্ডলকে নিজাম প্যালেসে গ্রেফতার করার পর তল্লাশি চালিয়ে তার পকেট থেকে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ২০৩ টাকা। একটি সাধারণ ও সস্তার কি–প্যাড মোবাইল ফোন তিনি ব্যবহার করতেন। সেটাও মিলেছে তার পকেটে। কোটি টাকা লেনদেনে অভ্যস্ত রঞ্জন নিজেকে নিঃস্ব বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন সিবিআইয়ের দফতরে।
এমনকী সিবিআইয়ের জেরায় রঞ্জন এসএসসি’র দুর্নীতির কোটি টাকার লেনদেন সম্পর্কে কোনও তথ্যই জানাতে চায়নি। তবে রঞ্জন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাসের উপর খাপ্পা। চন্দন মণ্ডলের অভিযোগ, উপেন বিশ্বাস তাকে পরিকল্পনা করে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।সিবিআইয়ের দাবি, চন্দন যে অত্যন্ত সাধারণ ও দরিদ্র, তা প্রমাণ করতেই তিনি নিজের কাছে বেশি টাকাও রাখতেন না। এমনকী, সিবিআইকে বলেন, তিনি অ্যানড্রয়েড মোবাইলও ব্যবহার করেন না। এছাড়া তাঁর কাছ থেকে বেশি কিছু উদ্ধার করা হয়নি। এদিন হুগলি, মুর্শিদাবাদ-সহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার আরও পাঁচজন এজেন্টকে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের কাছ থেকেও বেশি পরিমাণ টাকা সিবিআই উদ্ধার করতে পারেনি। সিবিআইয়ের মতে, কাছে টাকা না থাকলেও নাম ও বেনামে তাঁদের কত সম্পত্তি রয়েছে, তা জানা জরুরি। ধৃতদের জেরা করে সেই তথ্যই জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।