দেবরীনা মণ্ডল সাহা, কলকাতা :-গত বছর মুর্শিদাবাদের লালগোলায় এক চাকরিপ্রার্থী আত্মঘাতী হয়েছিলেন। তাঁর নাম আবদুর রহমান। পরিবারের অভিযোগ ছিল, টাকা দিয়ে চাকরি না পাওয়ার কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন ওই তরুণ। সেই মামলায় সোমবার কড়া মন্তব্য করলেন হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা |মুর্শিদাবাদের লালগোলার চাকরিপ্রার্থীর আত্মহত্যার নেপথ্য বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এমনই মন্তব্য করেন। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, “বৃহত্তর ষড়যন্ত্র উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ওই নোটে (আত্মঘাতী চাকরিপ্রার্থীর সুইসাইড নোট) দিবাকর কনুই নামে একজনকে দায়ী করা হয়েছে। তাঁকে তারাপীঠ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিবিআই কেন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না?”পুলিশের তরফ থেকে আদালতে জানানো হয়, আত্মঘাতী চাকরিপ্রার্থী আব্দুর রহমানের কাছ থেকে একটি ন’পাতার নোট পাওয়া গিয়েছে। তিনি কেবল প্রতারিত চাকরিপ্রার্থী তাই নয়, তিনি নিজেও জড়িয়ে পড়েছিলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে। পুলিশের চার্জশিটেই তাঁর নাম রয়েছে। আদালতের সামনে এই বিষয়টি তুলে ধরে পুলিশ। আদালতে পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে রহমানের। বৃহত্তর ষড়যন্ত্র খুঁজে বার করার সুযোগ রয়েছে। মৃত রহমান-সহ চার জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তখন বিচারপতির উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ, “সিবিআইয়ের বক্তব্য শুনতে হবে। কারণ লালগোলা থানা এখনও তদন্তে ত্রুটি করেনি। এসএসসি দুর্নীতির সঙ্গে এই ঘটনার যোগ রয়েছে। শুধু আত্মহত্যা নয়, কোর্ট নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও তদন্তের বিষয় নিয়ে চিন্তিত। তাই সিবিআই-এর মতামত চায়।”
এরপরই বিচারপতির প্রশ্ন, “সিবি আই কেন জেলে গিয়ে জেরা করছে না? বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা ওড়ানো যাচ্ছে না।” এই মামলার সিবিআই-এর মতামত চেয়েছেন বিচারপতি। বুধবার ফের শুনানি। ওইদিন সিবিআই-এর বক্তব্য শুনবে আদালত। তারপরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বিচারপতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন।উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাসিন্দা আবদুর রহমান, এসএসসি গ্রুপ-ডি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পরিবার সূত্রে খবর, সেই সময় এক দালাল যুবককে জানায়, পরীক্ষা না দিলেও প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি পাওয়া যাবে। কিন্তু তার জন্য ৬ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। ওই যুবকের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। কোনওরকম ২ লক্ষ টাকা জোগাড় করে দালালকে দেন আবদুর। এরপর সময় পেরিয়েছে কিন্তু চাকরি পাননি ওই যুবক। গত সেপ্টেম্বরে বাড়ি থেকে আবদুরের দেহ উদ্ধার হয়। ৯ পাতার সুইসাইড নোটও উদ্ধার করা হয়। মৃতের পরিবারের দাবি, মানসিক হতাশায় বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন।