প্রসেনজিৎ ধর :- সোমবারই কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের গোটা এসএসসি প্যানেলই বাতিল করেছে। তাতে গ্রুপ- সি, গ্রপ-ডি, নবম দশম, একাদশ দ্বাদশের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। চাকরিহারা হয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। তাঁদের মধ্যে অযোগ্যরা যেমন রয়েছেন, যোগ্য প্রার্থীরাও তো রয়েছেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশে রাতারাতি চাকরিহারা তাঁরাও। এবার তারই প্রতিবাদে আন্দোলনে বসলেন ‘যোগ্য’ চাকরিহারারা। ধর্মতলায় জমায়েত করেছেন তাঁরা। সুপ্রিম কোর্টেও মামলা করার কথা বলেছেন।মঙ্গলবার সকালে শহিদ মিনার চত্বরে ধর্নায় বসেন চাকরিহারাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্যের নির্যাস, কেন অযোগ্য কয়েক জনের জন্য যোগ্যদের শাস্তি পেতে হবে? সিবিআই এত দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে কেন যোগ্য আর অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের মধ্যে ফারাক করতে পারল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ধর্নায় বসা চাকরিহারারা।মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলার চাকরিহারা ব্যক্তিরা শহিদ মিনার চত্বরে জমায়েত করেন। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই বক্তব্য, হঠাৎ চাকরি হারালে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে বাঁচা যাবে না। তা ছাড়া সামাজিক সম্মানহানিরও প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। অযোগ্যদের জন্য কেন সমাজ তাঁদের অপরাধী হিসাবে দেখবে, সেই প্রশ্নও উঠে আসে। নবম-দশম শ্রেণির এক চাকরি হারানো শিক্ষক বলেন, “এই দেখুন আমাদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র), মেধাতালিকায় থাকা আমাদের নাম। আমরা তো অবৈধ উপায়ে চাকরি পাইনি। তাই এই সব কাগজ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাব। ন্যায়বিচার চাইব।”আরেক চাকরিহারা প্রার্থী বলেন, “আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে পারি, এই রায় একেবারেই অন্যায্য। ১৯ হাজার সৎকে বলি দেওয়া হল ৫ হাজার সৎকে বাঁচানোর জন্য।” আরেকজনের কথায়, “এটা আসলে ঠগ বাঁচতে গিয়ে গাঁ উজাড় হয়ে গেল। আমরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে এই জায়গায় এসেছি। আমাদের পড়াশোনাটা দেখলেই বুঝতে পারবেন, কীভাবে আমরা এই জায়গায় এসেছি। আমার কাছে আমার ওএমআর শিটও রয়েছে। আমার সঙ্গে আমার বয়স্ক বাবা-মা, আমার আড়াই বছরের ছেলে সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।”‘মানবিক কারণে’ সোমা দাস নামের এক চাকরিপ্রাপকের চাকরি বহাল রাখে আদালত। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। চাকরিহারাদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের অনেকের বাড়িতেই অসুস্থ এবং বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন। কারও বাড়িতে রয়েছে ছোট সন্তান। তা হলে আদালত কেন তাঁদের প্রতি মানবিক হল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ধর্নায় বসা চাকরিহারারা।