দেবরীনা মণ্ডল সাহা, কলকাতা :- ২০২৬ সালের ভোটের দামামা কার্যত বেজে গিয়েছে | এসআইআর-এর আবহেই এবার বাংলায় উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |২০১১ সাল থেকে অর্থাৎ গত ১৫ বছরে নানা সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরের কাজ কতটা এগিয়েছে রাজ্যে, তাতে রাজ্যবাসী কতটা উপকৃত হয়েছেন, সেই তথ্য-পরিসংখ্যান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’। হিসেবনিকেশ অনুযায়ী, গত ১৫ বছরের নিরিখে রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধি হয়েছে ৪.৪১ গুণ, কর আদায় ৫ গুণ হয়েছে। এছাড়া রাজ্যজুড়ে অসংখ্য ছোট ছোট কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভর প্রকল্প হয়েছে, যা পরিসংখ্যানের নিরিখে অত্যন্ত ভালো বলেই মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ”বাংলা এখন সারা দেশের মডেল।”এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা ছ’টা ভাষায় এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করছি। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে এই রিপোর্ট কার্ড আমরা উদ্বোধন করলাম। এর জন্যে একটা বিশেষ গান অবধি তৈরি করেছি। আগে মা-বোনেরা পাঁচালি গাইতেন। আগের দিনের গৌরবকে আমরা তুলে এনেছি। বাংলার মনীষীদের ছোঁয়া তাতে থাকছে। ইমন এই গান করেছে।’’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী-রাজ্যের উন্নয়নের পাঁচালীর বিবরণ:-
সাড়ে ১৪ বছরে রাজ্যের জিএসডিপি বেড়ে হয়েছে ২০ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকা। রাজ্যের কর আদায় বেড়েছে ৫.৩৩ গুণ। দারিদ্র সীমার বাইরে আনা হয়েছে ১ কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে। বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশ কমেছে। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে ৯.১৬ গুণ। কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ১ কোটি ৬০ হাজার কৃষক উপকৃত হয়েছে।
শিল্পে দুই কোটির বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। দু’লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেউচা পাচামিতে এক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। শুধুমাত্র স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রিতে এক কোটি ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ কাজ করেন। ৬৬০টির বেশি এমএসএমই ক্লাস্টার গঠন করা হয়েছে। ৪২ লক্ষ ছেলেমেয়েকে স্কিল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে
এক কোটি মহিলা কন্যাশ্রী পাচ্ছেন। ৩১ লক্ষ ৭৭ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক যাদের অনেককে অত্যাচার করা হয়েছে তাদের ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। লক্ষীর ভান্ডার পাচ্ছেন ২ কোটি ২১ লক্ষ মহিলা। এজন্য এখনও পর্যন্ত ৭৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমাদের বাজেট ১৪ বছরে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ২ কোটি ৪৫ লক্ষ পরিবারকে এর আওতায় আনা হয়েছে। আইসিসিইউ মডেলে ১০১ টা স্বাস্থ্য বন্ধু ভ্যান ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে, আরো হাতে রয়েছে ১১০ টা, সবমিলিয়ে ২১১ টা এমন ভ্যান।
বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ৬৭ লক্ষ ৬৯ হাজার বাড়ি অলরেডি দেওয়া হয়েছে। আরও ১৬ লক্ষ দেওয়া হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় এক কোটির কাছাকাছি হয়ে যাবে।
পথশ্রী প্রকল্পে মোট ১ লক্ষ ৯০ কিমি রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। গঙ্গাসাগরের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর উপর ১৭০০ কোটি টাকা দিয়ে গঙ্গাসাগর সেতু করা হচ্ছে। এটার টেন্ডার ফাইনাল হয়ে গেছে। খাদ্য সাথি ৯ কোটি মানুষ পায়। এরজন্য রাজ্যের খরচ হয় ১ কোটি টাকা। দুয়ারে রেশন ৭ কোটি ৪১ লক্ষ মানুষ পায়। সংখ্যালঘু উন্নয়নে ৪.৮৫ কোটি ছাত্র-ছাত্রীরা আর্থিক সুবিধা পেয়েছে। দশ গুন বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে এই দফতরে। ২০১১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৬ কোটি ৫৬ লক্ষ পাট্টা দেওয়া হয়েছে। সব উদ্বাস্তু কলোনিগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের দাবি, শুধু ২০২৫ এর অক্টোবরে ২৪ কোটি দেশি বিদেশি পর্যটক এসেছে বাংলা। পর্যটকের সংখ্যায় দেশের মধ্যে বাংলা এখন দ্বিতীয়।
বাংলার মানুষ সরকারকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। ১৪ বছর ৬ মাস ধরে কাজ করেছি। এটা আমাদের দায়িত্ব আমরা কি কাজ করেছি, সেটা মানুষের সামনে তুলে ধরার, জানালেন মমতা |
Hindustan TV Bangla Bengali News Portal