দেবরীনা মণ্ডল সাহা, কলকাতা :- রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে অবাধ ও স্বচ্ছ ভোটের জন্য হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ, সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই ভোট করতে হবে। খারিজ হয়ে গেল রাজ্য এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আর্জি।পঞ্চায়েত নির্বাচনকে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শনিবার সুপ্রিম কোর্টে স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য ও রাজ্যের কমিশন। সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী মীনাক্ষী আরোরা। তিনি জানিয়েছিলেন, হাইকোর্ট ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বুথওয়াড়ি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বাহিনী চাওয়া কমিশনের কাজ নয়। মঙ্গলবার সকালে শুনানির শুরু থেকেই কার্যত শীর্ষ আদালতের চাপের মুখে পড়ে কমিশন ও রাজ্য। কমিশনকে পর পর প্রশ্ন করতে থাকেন বিচারপতি নাগারত্ন। কিন্তু সেভাবে উত্তর দিতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় কমিশনকে।
এদিনের শুনানিতে বিচারপতির গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, ‘ভোট মানে হিংসার লাইসেন্স নয়’।মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি নাগরত্ন এদিন জানান, ‘ভোটে কোনও রকম অশান্তি হবে সেটা আশা করা যায় না। অতীতে রাজ্যে হিংসার ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। এই অবস্থায় হাইকোর্ট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছে। সেখানে অসুবিধার কিছু দেখছি না।’রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘‘নির্বাচন ঘোষণার পরের দিনই মামলা করা হয়ে গেল। তখন মনোনয়ন পর্ব চলছে। মনোনয়ন পর্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন কেন্দ্রের ১ কিমি পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ সহযোগিতা করেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছে। আমাদের স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত হয়নি। আমাদের সেই কাজ চলছিল। তা ছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি রাজ্য দেখে। এখানে কমিশনকে সরাসরি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।’’এদিন বিচারপতি নাগরত্ন জানান, ‘রাজ্য সরকার দেশের পাঁচ রাজ্য থেকে পুলিশ চেয়েছে। আর হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ তো কেন্দ্র দেবে। তাতে রাজ্যের অসুবিধা কোথায়? তা ছাড়া ভোটে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় বাহিনী হলে সমস্যা কোথায়? নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেখানে কমিশনের ওপর নয় তা হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কমিশন চিন্তিত কেন? আপনারা আপনাদের কাজ করুন। যেখান থেকেই বাহিনী আসুক, আপনাদের অসুবিধা কোথায়?’ এরপরেই দেশের শীর্ষ আদালত রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন খারিজ করে দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।