প্রসেনজিৎ ধর, কলকাতা :- এগরার পর দত্তপুকুর। মে মাসের পর আগস্ট। ঠিক সাড়ে তিন মাস পর ফের রাজ্যে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী ওই বাজি কারখানার বিস্ফোরণে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় আবার কাঠগড়ায় রাজ্যের শাসকদল। দত্তপুকুরের বাজি কারখানার বিস্ফোরণে তছনছ একটি গোটা কংক্রিটের বাড়ি। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে পাশের বাড়িগুলিরও বেশকিছু অংশ ভেঙে পড়ছে। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় বারাসাত হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে ৬ জনকে মৃত অবস্থায় আনা হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খব। পাশাপাশি ১ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে একটি ৮ বছরের বালকও রয়েছে।হাসপাতাল সূত্রে প্রাথমিকভাবে খবর বিস্ফোরণের পর বারাসত হাসপাতালে আনা হয় মোট ১১ জনকে। বাকীদের দেহ ভয়াবহ পুড়ে গিয়েছে। তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এদের সবারই অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্য়া আরও বাড়তে পারে।রবিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ দত্তপুকুরের নীলগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মোষপোল পশ্চিমপাড়া অঞ্চলে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক পড়ে রয়েছে দেহাংশ। এতটাই শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে যে দেহ উঠে যায় বাড়ির চালেও। এমনকী দোতলা বাড়িও প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি দেখে এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। বিকট বিস্ফোরণের কেঁপে ওঠে এলাকা। আওয়াজ পেয়ে যখন স্থানীয়রা সেখানে পৌঁছন, দেখতে পান, দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। সূত্রের খবর, প্রথমে বিস্ফোরণ হয়। তারপর তা থেকে আগুন লাগে।
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলছেন, “দীর্ঘদিন থেকে বাজি কারখানা বন্ধের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, করেনি। আজ তো এই কাণ্ড হয়ে গেল। ৭টা মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। আর কোথায় কোথায় দেহ পড়ে রয়েছে জানি না। মৃতদের মধ্যে অনেক বাইরের লোকও রয়েছে।”স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সহযোগিতায় এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই রমরমিয়ে বাজির কারবার চালানো হচ্ছিল। একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এলাকাবাসীর দাবি, কেরামত কারখানার মালিক। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর ছেলে রবিউল আলির মৃত্যু হয়েছে বিস্ফোরণের ঘটনায়। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন— সামসুল আলি, জাহিদ আলি নামে মুর্শিদাবাদের এক ব্যক্তির ও তাঁর ছেলের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সামসুলের জমিতে কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। কেরামতই সেই কারখানা চালাতেন। রবিউল ওই কারখানায় কাজ করতেন।রবিবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর এলাকায় গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী রথীন ঘোষ। তিনি দাবি করেছিলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় এক আইএসএফ নেতা রয়েছেন। তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে লোক এনে বাজি তৈরি করাচ্ছিলেন। রথীন বলেন, ‘‘এই বুথে আইএসএফ জিতেছে। স্থানীয় আইএসএফ নেতা রমজান আলি রয়েছেন এটার পিছনে। আমরা জানতাম না। পুলিশও জানত না।’’ পাল্টা, তৃণমূলের স্থানীয় দুই নেতার দিকে আঙুল তুললেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। বিধায়ক বলেন, ‘‘স্থানীয়েরা প্রশাসনকে একাধিক বার বেআইনি বাজি তৈরির কথা জানিয়েছিল। আইএসএফ যদি বাজি কারখানা চালাত, তা হলে কি প্রশাসন চুপ করে থাকত? বেআইনি বাজি কারবারের পিছনে তৃণমূলের দুই নেতা রয়েছে— কেরামত আলি আর আজিবর আলি। ওরা ভানু বাগের (এগরাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত) মতো পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। যারা আমাদের নামে অভিযোগ করছে, তারাই এই সব বাজি কারখানা থেকে টাকা পেত।’
Hindustan TV Bangla Bengali News Portal