দেবরীনা মণ্ডল সাহা, কলকাতা :- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কলকাতার ট্যাংরার কিশোরীর আলাপ হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের এক যুবকের সঙ্গে | সেই আলাপের রেশ ধরে জন্ম নেয় ভালো লাগা, ক্রমে গড়ে ওঠে ‘ভালবাসা’ | আর সেই টানে কলকাতা থেকে চলে গিয়েছিলেন সোজা উত্তরপ্রেদেশের ফৈজাবাদে | আর সেখানে ‘বন্ধু’র ডেরায় গিয়ে ঠাঁই হল গোয়ালঘরে | সঙ্গে চলতে থাকল যৌন অত্যাচার,ওই নাবালিকার অভিযোগ এমনটাই | ইতিমধ্যে ওই নির্যাতিতা কিশোরীকে উদ্ধার করেছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল | পাশাপাশি রোশন সিং নামের অভিযুক্ত ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ | পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্যাংরার বাসিন্দা ওই নাবালিকা দশম শ্রেণির ছাত্রী | তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হয় উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রোশনের সঙ্গে, বন্ধুত্ব থেকে ক্রমাগত চ্যাট | সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমের ফাঁদ পাততে থাকে ওই যুবক | বুঝতেও পারেনি যে, উত্তরপ্রদেশের একটি কুখ্যাত নারী পাচার চক্রের কবলে পড়তে চলেছে সে | গত সপ্তাহে স্কুলে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি | অভিভাবকরা তাকে ফোন করেও দেখেন, মোবাইল চালু থাকলেও ফোন ধরছে না সে | খোঁজাখুঁজি করেও মেয়ের সন্ধান না পেয়ে মা ট্যাংরা থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন | অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবক রোশন কিশোরীকে বিয়ের টোপ দিলেও ফৈজাবাদে তার বাড়িতে আসার পর তাকে গরু ও বলদের সঙ্গে আটকে রাখা হয় গোয়ালঘরে | সেখানেই তাকে খেতে দেওয়া হত | গোয়ালঘর থেকে কোনওদিন বের হতে দেওয়া হয়নি | কিশোরীর আরও অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবক ওই গোয়ালে তার ওপর যৌন অত্যাচার চালাত | এমনকি তার মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয় সে | ওই বাড়ির একজনের ফোন থেকে কোনওভাবে মাকে ফোন করে বিষয়টি জানায় সে | অভিযোগ, ওই কিশোরীকে উত্তরপ্রদেশের অন্য একটি গ্রামে এক উচ্চবিত্ত ব্যক্তির কাছে চড়া দামে বিক্রি করারও ছক কষে অভিযুক্ত যুবক | সেখানে ভালো দাম না পেলে যৌনপল্লিতে নিয়ে গিয়ে কিশোরীকে বিক্রি করার পরিকল্পনা করা হয় | তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ওই যুবক নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত | চিন্তিত হয়ে ওই নাবালিকার মা ট্যাংরা থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন | আর সেই অভিযোগের তদন্তে নেমে প্রথমে পুলিশ বিভিন্ন সূত্র মারফত তথ্য জোগাড় করতে থাকে | তার মাঝেই একদিন ওই কিশোরীর মায়ের ফোনে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে| সেই ফোন ধরতেই ওই কিশোরীর মা শুনতে পান মেয়ের কণ্ঠ। অপহৃত কিশোরী ফোনে তার মা’কে জানায়, ‘ফৈজাবাদের গ্রামে একটি গোয়ালঘরে তাকে চারজন মিলে আটকে রেখে অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে |’ এর পর ফোন কেটে যায় | সেই মোবাইলটিও সুইচ অফ হয়ে যায়| এরপর ওই মোবাইলে কলের সূত্র ধরেই ট্যাংরা থানার আধিকারিকরা হানা দেয় উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে | সেখানে গ্রামে গিয়ে রোশনের বাড়িটি শনাক্ত করেন তদন্তকারীরা | অভিযুক্তের বাড়ির বন্ধ গোয়ালঘরের শেকল খুলে তার ভিতর থেকেই কিশোরীকে উদ্ধার করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা | অভিযুক্ত যুবকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে অপহরণ, নাবালিকাকে ধরে আটকে রাখা, ধর্ষণ ও পকসো মামলার ধারা রুজু করেছে পুলিশ |