প্রসেনজিৎ ধর :- শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের নামে ‘বসন্ত তাণ্ডব’ হয়। তাই তাঁরা উদ্যোগী হয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছেন। বুধবার বিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহে বসে এমনই মন্তব্য করলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তাঁর এ-ও অভিযোগ, বিশ্বভারতী অশিক্ষিত এবং অল্পশিক্ষিত ব্যক্তিতে ভরে গিয়েছে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘এমন বসন্ত উৎসব’ চাননি।কোভিডের কারণ ২০২০ সাল থেকে বন্ধ বসন্ত উৎসব। গতবছর পরিস্থিতি আয়ত্তে এলেও বসন্ত উৎসব হয়নি। এবছরও হচ্ছে না বসন্ত উৎসব। বরং আয়োজন করা হয়েছে বসন্ত বন্দনার। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত? তা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই জল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। তা নিয়ে উপাসনা গৃহে বসে মুখ খুললেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বসন্ত উৎসবের নামে বসন্ত তাণ্ডব চলে বিশ্বভারতীতে। কিছু বুড়ো খোকারা থাকেন এর পিছনে। তাই তাণ্ডব বন্ধ করেছি। বসন্ত বন্দনা হবে।”বিদ্যুতের দাবি, বসন্ত উৎসবের নামে তাণ্ডবের পিছনে ‘‘কিছু বুড়ো খোকার ভূমিকা থাকে।’’ অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একাংশকে নিশানা করেছেন উপাচার্য। তিনি জানান, এ বারও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে বসন্ত উৎসব হচ্ছে না। তার পরিবর্তে করা হচ্ছে বসন্ত বন্দনা। আগামী ৩ মার্চ ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে বাইরের কারও প্রবেশাধিকার থাকবে না। শুধুমাত্র উপস্থিত থাকতে পারবেন বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা।
কেন ‘বসন্ত বন্দনা’র আয়োজন হয়েছে, এ নিয়ে বলতে গিয়ে বিদ্যুৎ বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে বসন্ত উৎসবের নামে ২০১৯ সালে তাণ্ডব দেখেছিলাম। সেই তাণ্ডবই আমরা বন্ধ করেছি। তার বদলে করা হচ্ছে ‘বসন্ত বন্দনা’। এর পরই উপাচার্য বলেন, ‘‘২০১৯ সালে বসন্ত উৎসব বসন্ত তাণ্ডবে পরিণত হয়েছিল। তাই বন্ধ করেছি। এখন বসন্ত বন্দনা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, রবীন্দ্রনাথ উৎসব চাননি, চেয়েছিলেন বন্দনা। উৎসবের নামে এই তাণ্ডব হবে, ভাবতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ। তাই বিশ্বভারতী এই তাণ্ডব বন্ধ করতে চেয়েছে।উল্লেখ্য বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসব মানে একটা আলাদা মাত্রা রয়েছে। সেই উৎসবে যেমন বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ও শিক্ষক শিক্ষিকারা অংশ নিতেন তেমনই বাইরে থেকে বহু মানুষ রঙের টানে ছুটে যেতেন বিশ্বভারতীতে। কিন্তু কোভিড সংক্রমণের কারণে গত ৩ বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। ১৯০৭ সালে রবীন্দ্রনাথের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উৎসব চালু করেন। বসন্তকে স্বাগত জানাতে উৎসবের সূচনা করেন তিনি। পরে এই উৎসব ‘বসন্ত উৎসব’ নামে পরিচিত হয়। প্রথমে বসন্তের যে কোনও দিন অনুষ্ঠিত হলেও, পরের দিকে শুধুমাত্র বসন্ত-পূর্ণিমার দিনেই এই উৎসব হত। ঐতিহ্যবাহী সেই উৎসবকে এবার বন্ধ করে দিল বিশ্বভারতী।