তিথি রায় :- রাজ্যের মন্ত্রী সেই উদয়ন এ বার বিঁধলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুকে। উদয়নের অভিযোগ, বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মেধাবী পড়ুয়াদের বঞ্চিত করে বহু সাধারণ মানের ছাত্রছাত্রীকে ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। উদয়নের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম। দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলকে পাল্টা বিঁধেছে সিপিএম।
বাম আমলে ‘চিরকুটে চাকরি’র অভিযোগ তুলে কয়েকদিন আগেই রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। এবার আরও একধাপ এগিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুললেন কোচবিহারে দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। একটি সভায় বক্তব্য রাখার সময় উদয়ন গুহ বলেন, “জ্যোতি বসু বড় দুর্নীতি করেছেন। একটা সময় যখন বাংলায় মেডিক্যাল কলেজে, ডাক্তারি পড়ার জন্য ছাত্র ভর্তি হত, আসন কম ছিল, সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর কোটা ছিল। ১০টা ডাক্তারিতে, ১০টা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেও অনেকে জয়েন্টে চান্স পাননি। কিন্তু, সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করেও দিনহাটার সিপিআইএম নেতা মানিক দত্তর ছেলে আজ ডাক্তার হয়েছেন জ্যোতিবাবুর কোটায়”। যদিও উদয়ন গুহর এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বামেরা। এই প্রসঙ্গে এক বাম নেতা বলেন, “কে উদয়ন গুহ? ওর কথার কোনও জবাব দেবে না। আগে লিস্ট বার করুক তারপর কথা হবে”। পাশাপাশি কোচবিহারের অপর এক বাম নেতা বলেন, “তৃণমূল দলটা আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে।
গোটা দেশের মানুষ জ্যোতি বসুকে সম্মান করে। কোনও চুনোপুটি নেতা তাঁর প্রসঙ্গে ঠিক কী মন্তব্য করল তার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না”।প্রসঙ্গত বামফ্রন্ট জমানাকে কাঠগড়ায় তুলে রবিবার সকালে এই মর্মে একটি টুইট করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাতে কুণাল লেখেন, ‘‘বামফ্রন্ট জমানায় ডাক্তারি পড়তে মুখ্যমন্ত্রীর কোটা ছিল। এই কোটা ২০১১-র পর তুলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম জমানায় মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় ক’জন এবং কারা ডাক্তারি পড়েছিলেন, অধিকাংশই জয়েন্টে না পেয়েও কোটায় ঢোকার অভিযোগ উঠত কেন, সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করুক সিপিএম।’’উদয়নের পিতা কমল ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের চেয়ারম্যান। শরিক দল হিসাবে বামফ্রন্ট সরকারে ১৯৭৭ সাল থেকে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ছিলেন কমল। টানা ১৪ বছর ওই দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পিতা কমলকে নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে উদয়ন মন্তব্য করেন, ‘‘বাবার সামনে বসে তালিকা তৈরি হয়েছিল। বাবা সেই তালিকাকে এনডোর্স করে দিয়েছিলেন। সেখানে তো যোগ্য ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সেটা দুর্নীতির একটা অঙ্গ। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যারা আজকে রাস্তায় বসে যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলছে তাদের পূর্বসূরিরা যোগ্যদের বঞ্চিত করেই চাকরি দিয়েছে।’’সব মিলিয়ে ফের একবার উদয়ন গুহের মন্তব্যে শোরগোল পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।