ইন্দ্রজিত মল্লিক:- ১০ মার্চ ‘জনগর্জন সভা’ থেকে রাজ্যের ৪২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল। সেই তালিকা থেকে বাদ গেছে অনেকেই। সেই তালিকারই ৪ জন প্রার্থীকে নিয়েই বিতর্কে তৃণমূল। তারা হলেন আরামবাগের প্রার্থী মিতালি বাগ, আসানসোলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা, বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রার্থী কীর্তি আজাদ ও বহরমপুরের প্রার্থী ইউসুফ পাঠান। তৃণমূলের অন্দরে শোনা যাচ্ছে যে দলেকি নেতার অভাব যে ভিনরাজ্য থেকে লোক খুঁজে বের করতে হচ্ছে।
২০২১ এর রাজ্য বিজেপি একাধিক তাবোড় নেতাদের নির্বাচনের প্রচারে এনেছিলো। তাতে যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ছিলেন, তেমন ছিলেন পড়শী বিজপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। সেই সময় ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ‘আইপ্যাক’ এর ঠিক করা ‘বহিরাগত’ শব্দের শব্দবান তাদের উদ্দেশ্যে ছোঁড়ে তৃণমূল। তার মধ্যে ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ ছিলো অন্যতম। তৃণমূল এই শব্দ বাক্য দ্বারা বৃহত্তর জনমত তৈরী করে ভোটারদের মন ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। বিপুল আসনে জয় হয় তৃণমূলের।
সেই রীতি ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনেও অব্যাহত। বিজেপির প্রথম দফার প্রার্থী ঘোষণার পর আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী পবন সিংএর বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে ‘বহিরাগত’ ও ‘বাঙালি বিদ্বেষী’ প্রচার চালায় তৃণমূল। অবশেষে তিনি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু রবিবারের ‘জনগর্জন সভা’ থেকে ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে চারজনই ভিন রাজ্যের। ইউসুফ পাঠান সুদূর গুজরাট থেকে পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে সম্ভ্যব্য কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে। আবার কীর্তি আজাদ ও শত্রুঘ্ন সিনহা বিহার থেকে সোজা যথাক্রমে বর্ধমান-দুর্গাপুর ও আসানসোলের তৃণমূলের টিকিটে। এর মধ্যে কীর্তি আজাদ বিহারের দরভাঙ্গা থেকে দুবারের নির্বচিত সাংসদ ছিলেন। এই তালিকাতে রয়েছেন আরামবাগের তৃণমূলের প্রার্থী মিতালি বাগও। আরামবাগে কান পাতলে শোনা যায় মিতালি বাগ হাজিপুরের বাসিন্দা ছিলেন। যিনি বর্তমানে হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য। মিতালি বলেন, “অনেকদিনই হলো আমি এখানে আছি। জেলা পরিষদের সদস্যও হয়েছি। দিদির উন্নয়নই প্রচার করবো। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে।” প্রসঙ্গত, রাজ্যসভা নির্বাচনেও তিনজন প্রার্থী তৃণমূলের টিকিটে পর্শ্চিমবঙ্গ থেকে জিতে ছিলেন। তারা ছিলেন, সুস্মিতা দেব অসমের বাসিন্দা, সাগরিকা ঘোষ ও সকেত গোখলে দুইজনেই দিল্লির বাসিন্দা।
কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপিও। মঙ্গলবার এক্স-এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ভিন রাজ্য থেকে এসে তৃণমূলের টিকিটে জেতা রাজ্যসভার সদস্যদের ও তৃণমূলের প্রার্থীদের নিয়ে পোস্ট করে বলেন, “ ভারতবর্ষের সংবিধান অনুযায়ী কোনও ভারতীয় নাগরিক, তিনি যে প্রদেশেরই হোন না কেন, অন্য কোনো প্রদেশে তাঁকে বহিরাগত আখ্যা দেওয়া যায় না।” তিনি আরও বলেন, “আমরাও কখনো কারুর গায়ে বহিরাগত তকমা সেঁটে দেইনি। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব বরাবর নিজেদের সুবিধার্থে ও স্বচ্ছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে সর্বভারতীয় স্তরের নেতাদের বহিরাগত বলে চিহ্নিত করেছে।আজ আয়নাটা ওনাদের মুখের সামনে তুলে ধরলাম।”