প্রসেনজিৎ ধর, কলকাতা :- ভাই হলেও বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি যে কোনও প্রশ্রয় দেবেন না তা স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ্যেই বললেন, “আমি পরিবারতন্ত্র করি না। যে যেখানে ইচ্ছে ভোটে লড়তে পারে। আমার কিছু যায় আসে না। ওঁর সঙ্গে আমাদের পরিবারের আর কোনও কোনও যোগ নেই।”সে কথা শুনেই সুর বদলালেন বাবুন।বুধবার সকালেই তিনি হাওড়া সদরের তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। প্রার্থী পছন্দ হয়নি জানিয়ে বাবুন এমনও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, দিদি তাঁকে অনুমতি না দিলেও তিনি হাওড়া থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়বেন। দুপুরে সেই বাবুনই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জানিয়ে দিলেন, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না। আর দিদি তাঁকে নিয়ে যা যা বলেছেন, তার সবটুকুই তিনি ‘দিদির আশীর্বাদ’ হিসাবেই নিচ্ছেন।বুধবার শিলিগুড়িতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে ছোট ভাই বাবুনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা করেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা। হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বাবুন। তিনি জানিয়েছিলেন, দলের প্রার্থী তালিকা দেখে অভিমান হয়েছে তাঁর। বাবুন আরও বলেছিলেন, ‘‘যে ক্লাস ফাইভ পাশ করতে পারে না। তাকে দিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করানো হচ্ছে। প্রসূনের থেকে অনেক ভাল ভাল প্রার্থী ছিল হাওড়ায়। অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, রানা চট্টোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই ছিলেন। কিন্তু তাদের প্রার্থী না করে এমন একজনকে দেওয়া হল যার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমার মতে, ওর মতো বাজে লোককে না দেওয়াই উচিত ছিল।’’ এ প্রসঙ্গেই হাওড়া থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন বাবুন। জানিয়েছিলেন, দিদি না করলেও তাঁকে বোঝাবেন, কেন ভোট দাঁড়াচ্ছেন।বাবুনের ওই মন্তব্যের পরই আসে মমতার জবাব।শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘ও ছোটবেলার কথা ভুলে গিয়েছে। বাবা যখন মারা গেল, ওর তখন আড়াই বছর বয়স। আমি আমার পরিবারের সবাইকে মানুষ করেছি। স্কুলে পড়িয়ে ৪৫ টাকা পেতাম। তার পর আমি রাজনীতি করতে শুরু করি। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের সব ভোটেই দাঁড়ানোর ইচ্ছা হয়। কাউন্সিলর, এমএলএ, এমপি সব ভোটে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু আমি পরিবারতন্ত্র করি না। মানুষতন্ত্র করি। লোভীদের আমি পছন্দ করি না।’’ একই সঙ্গে মমতা স্পষ্ট করে দেন, ‘‘যে যেখানে খুশি যেতে পারে। স্বাধীন ভাবে ভোটে দাঁড়াতে পারে। তবে হাওড়া সদরে তৃণমূলের প্রার্থী, জোড়াফুলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ই। অন্য কেউ নয়।’’ মমতার এই মন্তব্যের পরই বাবুন জানিয়ে দেন, তিনি নির্দল প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে যে কথা বলেছিলেন, তা ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বাবুনের কথায়, ‘‘আমি বিজেপিতে যাচ্ছি না। কোথাও নির্দল প্রার্থী হিসাবেও লড়ব না। দিদি আমাকে যা বলেছে তা আমি দিদির আশীর্বাদ হিসাবে নিচ্ছি।’’