প্রসেনজিৎ ধর,হুগলি:- সরকারি হাসপাতালে আশার আলো দেখাল চন্দননগর মহকুমা হাসপাতাল |এক বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল এই হাসপাতাল | সীমিত পরিষেবা নিয়ে অসাধ্য সাধন করেছেন চন্দননগরের এই ছোট হাসপাতালের চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাস | এক মহিলার দেহে ছ’বছর ধরে গড়ে ওঠা একটি বিশালাকায় টিউমারের সফল অস্ত্রোপচার হল তাঁর নেতৃত্বে |ভদ্রেশ্বর বিঘাটির গৌরাঙ্গপুরের বাসিন্দা রিতা রায়ের(৫০)। তাঁর ডান বাহুমূলের নিম্নাংশে(বগল) একটি টিউমার ধরা পরে। একাধিক চিকিৎসককে দেখান তিনি। প্রত্যেকেই অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। বাড়িতে প্রতিবন্ধী ছেলে। আর্থিক সচ্ছলতাও নেই। তাই বড় হাসপাতালে ভর্তি হতে সমস্যা হচ্ছিল। ফলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করাতে থাকেন।এভাবে কেটে যায় ছয় বছর।মাস খানেক আগে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে সার্জেন আত্মদীপ বিশ্বাসকে দেখান। চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাকে জানিয়ে দেন, এখনই অস্ত্রোপচার না করলে ওই টিউমর ক্যানসারে পরিণত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বড় কোনও মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন ডাক্তারবাবু। কিন্তু প্রৌঢ়া অর্থাভবে চন্দননগর হাসপাতালেই অপারেশন করতে চান। এতে সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যে প্রৌঢ়ার অপারেশনের দায়িত্ব নেন ওই চিকিৎসক। প্রৌঢ়ার ইউএসজি এমআরআই করা হয়।গত সপ্তাহে ভর্তি হন প্রৌঢ়া। এরপর জটিল অপারেশন করে প্রৌঢ়ার শরীর থেকে টিউমার বের করে আনা হয়। হাসপাতাল সুপার সন্তু ঘোষ জানিয়েছেন, ওই মহিলার শরীর থেকে পাঁচশ গ্রাম ওজনের এক স্কয়ার ফুট ব্যাসার্ধের টিউমার কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর সুস্থ হলে ছুটি দেওয়া হয়েছে তাঁকে।ডাক্তার আত্মদীপ বিশ্বাস বলেন, “ইউএসজি করে দেখা যায় টিউমার প্রায় পাঁজর ছুঁয়ে গেছিল।জেলার হাসপাতালে তো সেইভাবে পরিকাঠামো থাকে নেই। তবুও রোগীর অনুমতিতে ঝুঁকি নিয়ে এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।”সুপার বলেন, একটা মহকুমার সরকারি হাসপাতালে সীমিত পরিকাঠামোতে ঝুঁকি নিয়ে এত বড় অপারেশন সফল হয়েছে। এটা আমাদের মিলিত চেষ্টায় সফল। হাসপাতালে আনাস্থিসিস্ট চিকিৎসকরা সব রকম চেষ্টা করেন। সফলও হন।মিতা রায় এখন সুস্থ ৷ এই সফল অস্ত্রোপচারে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাসকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ৷ এই প্রসঙ্গে মিতা রায় বলেন, “আমার পিঠে একটি বড় টিউমার ছিল ৷ ৬-৭ বছর ধরে ভুগছিলাম ৷ চন্দননগর হাসপাতালে যোগাযোগ করি ৷ চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাস আমার অস্ত্রোপচার করেছেন ৷ এখন আমি সুস্থ ৷ যা হয়েছে, সব বিনামূল্যে হয়েছে ৷” তিনি আরও বলেন, “আমি প্রথমে অপারেশন করাতে চাইনি ৷ কারণ, আমার একটি ৩০ বছরের বিশেষভাবে সক্ষম ছেলে রয়েছে ৷ আমার পক্ষে কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল না|”