প্রসেনজিৎ ধর :-পুলিশ আধিকারিককে ফোন করে গালিগালাজ করার ঘটনায় দলের নির্দেশ মেনে ক্ষমা চাইলেন অনুব্রত মণ্ডল ৷ বীরভূমের বোলপুর থানার আইসিকে গালিগালাজ করার বিষয়টি সামনে আসার পর তৃণমূলের তরফে তাঁকে চার ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল | তবে সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার অনেক আগেই ক্ষমা চেয়েছেন| যদিও ক্ষমা চাইলেও এখনই পার পাচ্ছেন না তৃণমূল নেতা| আগামিকাল তাঁকে বোলপুর থানায় তলব করা হয়েছে৷ অনুব্রতর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে বীরভূম জেলা পুলিশ |তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ পেয়ে আর সময় নষ্ট করেননি তিনি। চিঠি লিখে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। অনুব্রতর বক্তব্য, ”সাম্প্রতিক ঘটনায় আমি দুঃখিত। দিদির পুলিশের কাছে আমি একবার কেন, ১০০ বার ক্ষমা চাইতে পারি।” চিঠির শেষেও তিনি লিখেছেন, ”কোনও পুলিশ বন্ধু আমাকে ভুল বুঝলে আমি দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।”প্রতিদিনের মতো শুক্রবার দুপুরেও বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে পৌঁছন অনুব্রত। তবে এদিন দলীয় দফতরে তাঁকে ঘিরে দেখা যায়নি চেনা ভিড়। ততক্ষণে দলের তরফে অনুব্রতকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে। এর পরই দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষমা চাইবেন বলে জানিয়ে দেন অনুব্রত। ওদিকে বাইরে কীভাবে ও কতক্ষণে অনুব্রত ক্ষমা চান তার অপেক্ষায় ছিলেন সাংবাদিকরা। বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ প্রকাশ্যে আসে ক্ষমা চেয়ে অনুব্রতর লেখা চিঠি|বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় একটি অডিয়ো ক্লিপ। তাতে অনুব্রত মণ্ডলকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে শোনা যায় বোলপুর থানার আইসিকে। এমনকী আইসির স্ত্রীকে নিয়ে অত্যন্ত অসম্মানজনক মন্তব্য করেন তিনি। শুক্রবার সেই অডিয়ো ক্লিপটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এরপরই তৎপরতা বাড়ে পুলিশমহলে। অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চেয়ে নবান্নের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। দুপুরে সেই অনুমতি পৌঁছলে FIR দায়ের হয় কেষ্ট মণ্ডলের বিরুদ্ধে।এরপর আর একটুও সময় নষ্ট করেননি বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। সঙ্গে সঙ্গে চিঠি লিখে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন কেষ্ট মণ্ডল। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ পুলিশকর্মী থেকে একজন বড় অফিসার সবাই দিদির কাছের মানুষ। তাদের অপমান করার কথা ভাবতে পারিনা। সাম্প্রতিক ঘটনায় আমি দুঃখিত। দিদির পুলিশের কাছে আমি একবার কেন, ১০০ বার ক্ষমা চাইতে পারি। আসলে আমি নানা রকম ওষুধ খায় এবং দিদির পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগ করলে মাথা গরম হয়ে যায়। সত্যি আমি দুঃখিত। কিন্তু আপনাদের ভাবতে হবে তিনটি মহকুমা বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাটে বিশাল মানুষের মহামিছিল দেখে কারা ভয় পেল? বিজেপি কিকরে আমার আর আমাদের বোলপুরের আইসিকে গালমন্দর ফুটেজ পেল? কে দিল? কোন চক্রান্ত নেই তো?’ চিঠির শেষাংশে তাঁর বক্তব্য, ‘তবুও আমি বলছি কোনও পুলিশ বন্ধু আমাকে ভুল বুঝলে আমি দুঃখিত ও
ক্ষমাপ্রার্থী।’
এরপর দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির কাছেও চিঠি পাঠান অনুব্রত।এদিন হুমকি-অডিয়ো প্রসঙ্গে কেষ্ট ব্যাখ্যায় চলে যান। তিনি বলেন, ‘‘রাতে অনেক ওষুধপত্র খাই তো! এখন আমি রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের ওষুধ খেতে হয় আমাকে। সে দিন নুরুল নামে আমাদের এক কর্মীর ছেলে আমাকে জানায়, মেরে ওর হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তখন আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমি আইসি-কে ফোন করে বলেছিলাম, ‘আপনি যান, ছেলেটাকে ছাড়িয়ে আনুন।’ তখন উনি আমায় একটা অন্য ধরনের কথা বলেন। সেটা এখন বলতে রাজি নই। তখন আমি নিজের রাগ সামলাতে পারিনি। আমি এই কথা বলেছি। সে জন্য আমি দুঃখিত।’’
Hindustan TV Bangla Bengali News Portal