প্রসেনজিৎ ধর :- বর্ষা এলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বহু আগে ঘোষিত হয়েছিল ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। সেই প্রসঙ্গেই ফের একবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।কেন্দ্রকে দুষে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ”ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান করার কথা অনেক আগে। তা তো করেইনি। আমরাই কাজ শুরু করেছি। ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে। দু থেকে তিন বছর সময় লাগবে। মানসদা তো কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পের জন্য ২০ বার চিৎকার করেছেন। তাও ওরা করে দেয়নি। আমরাই সেই কাজ করেছি। এখনও ঘাটালও করছি। এতে মেদিনীপুরের মানুষের ভালো হবে। বর্ষার সময় আর জলে ভাসতে হবে না। কাজ এগোচ্ছে।” ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জমি সমস্যার অভিযোগ উঠেছে মাঝেমধ্যে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ”জমি নিয়ে সমস্যা তৈরি হলে প্ল্যানটা একটু ঘুরিয়ে দিন, তাহলেই তো মিটে যায়।” মঙ্গলবার বিধানসভায় পরিবেশরক্ষার শপথ নেন মমতা। সেখানেই তাঁর অভিযোগ, কোনওরকম আগাম বার্তা ছাড়াই মাইথন ও পাঞ্চেত সহ বিভিন্ন বাঁধ থেকে জল ছেড়ে দিচ্ছে ডিভিসি। এমনকি বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকেও জল ছাড়ায় বাংলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের জলবন্দি পরিস্থিতির জন্য তিনি দায়ী করেন ভূটানকে। বলেন, ইন্দো-ভূটান নদী কমিটিতে বাংলার কোনও প্রতিনিধি নেই। তাই সেখানে বাংলার অবস্থান কেউ তুলে ধরতে পারে না।’
ঘাটালের দুর্দশা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করতে জমি নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। প্রয়োজনে রুট ঘুরিয়ে দিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী যাতে কারও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। একইসঙ্গে জানিয়ে দেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ইতিমধ্যে রাজ্য বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য ৫০০ কোটি এবং মোট ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে রাজনৈতিক চাপানউতোরও তীব্র। ঘাটালের সাংসদ দেব সম্প্রতি কেন্দ্রের নিষ্ক্রিয়তাকে দুষে বলেছেন, ১০ বছর ধরে বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও কেন্দ্র থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন ঘাটাল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন কটাক্ষে বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি, তখন পাল্টা জবাবও দিয়েছেন এই তারকা সাংসদ। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়েও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১১ সালে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র দেড় লক্ষ পুকুর কাটার কথা বলেছিলেন। সেই ভাবনা থেকেই ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পে ইতিমধ্যে সাড়ে চার লক্ষ পুকুর কাটা হয়েছে। মমতার মতে, যত বেশি পুকুর থাকবে, বৃষ্টির জল তত বেশি ধরে রাখা যাবে এবং বন্যার প্রকোপও কমবে। সেইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, পুকুর বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ড্রেজিং না হওয়াকেও বড় কারণ হিসেবে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলার দুই বন্দরে সময়মতো ড্রেজিং না হওয়ার ফলে জল নিষ্কাশনে সমস্যা তৈরি হয়। এ নিয়ে পুর ও পরিবেশ দফতরকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি |২০২৪-এর লোকসভা ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছিলেন, ওই প্রকল্প রাজ্য সরকার একাই কার্যকর করবে। সেই মতো চলতি বছরের রাজ্য বাজেটে মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির জন্য আপাতত থমকে রয়েছে এই মাস্টারপ্ল্যানের কাজ।
Hindustan TV Bangla Bengali News Portal