প্রসেনজিৎ ধর :- বহরমপুরে কলেজছাত্রীকে খুনের ঘটনায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য | খুন করার কয়েক দিন আগে সুশান্ত চৌধুরী তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে শেষ যে বার্তাটি পাঠিয়েছিল সেটি উদ্ধার হয়েছে| সুতপার পরিবারের ঘনিষ্ঠ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণীও ওই হোয়াটসঅ্যাপের কথা জানতেন বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন | সুতপা তাঁকে বলেছিলেন ওই বার্তার কথা।তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সুশান্ত হোয়াটসঅ্যাপে সুতপাকে লিখেছিল, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি | স্বপ্ন দেখি সুন্দর জীবনের | কিন্তু আমার জীবন তুই নষ্ট করে দিচ্ছিস | বিশ্বাস করতে পারছি না তোকে | তুই নষ্ট করছিস আমার মতন অনেককেই | এভাবে চলতে থাকলে ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে তোর |’এর আগে সুশান্তের ফেসবুক প্রোফাইলে একাধিক পোস্টে দেখা গিয়েছে শুধুই প্রতিহিংসার বার্তা | ভিডিয়ো হোক বা লেখা, সর্বত্রই ছিল ক্ষোভের আঁচ | প্রায় এক বছর ধরেই সুশান্তের ওয়াল ভরে উঠেছে হুমকি, ঘৃণা, ক্ষোভ, প্রতিহিংসার আবহে | তার আগে যদিও সুশান্তের ফেসবুকে পোস্ট করা হত শুধুই প্রেমের কথা, ছবি, ভিডিয়ো | বছরখানেক ধরে সুশান্ত ফেসবুকে যে সমস্ত পোস্ট করেছে, তা পর্যবেক্ষণ করে তদন্তকারীদের ধারণা, এই সময়টা জুড়ে তার মনে অস্থিরতা চলছিল | তারই প্রকাশ দেখা গিয়েছে ফেসবুকে| এ বার সুতপাকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাতেও তদন্তকারীরা পেলেন সেই ক্ষোভেরই আঁচ |সুতপার বাবা জানিয়েছিলেন, তাঁর বড় মেয়ে সুশান্তের কারণেই অন্তত পাঁচ বার মোবাইল নম্বর বদলেছিলেন| যদিও নতুন সেই নম্বর কোনও না কোনও ভাবে জেনে যেত সুশান্ত| সুতপারই কোনও বন্ধুর মাধ্যমে সে নম্বর জানত বলে সুতপার পরিবারের দাবি | তবে তদন্তকারীদের কাছে সুশান্ত জানিয়েছে, সুতপার ‘বান্ধবী’র কাছ থেকেই সমস্ত তথ্য সে জানতে পারত | সুতপার সঙ্গে সম্প্রতি এক তরুণের ঘনিষ্ঠতার কথাও সুশান্ত জানতে পারে বলে পুলিশকে জানিয়েছে সে | তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, জঙ্গিপুর কলেজের ছাত্র ওই তরুণের সঙ্গেই খুনের দিন সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন সুতপা | সুশান্ত সে কথা জানতে পারে| তারপরেই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে সে| জঙ্গিপুর কলেজের ওই ছাত্রকে পুলিশ ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে | ওই তরুণ সেদিন সুতপার সঙ্গে মোহন শপিং মলে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন | তাঁর সঙ্গে সুতপার শুধু ‘বন্ধুত্ব’ই ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি | যদিও সুশান্তের পরিবারের লোকজনের দাবি, সুতপা সুন্দরী হওয়ায় অনেক যুবকের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতেন | একই সঙ্গে সুশান্তকেও ‘উস্কানি’ দিতেন। সুশান্তের পিসি শান্তিরানি চৌধুরীও একই অভিযোগ করেছেন | তাঁর কাছেই সুশান্ত মানুষ হয়েছে | নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুশান্তের এক বন্ধু বলছেন, ‘‘সুতপাই প্রথম প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল আমার বন্ধুকে | প্রথমে সুশান্ত এড়িয়ে গিয়েছিল | তারপর নিজের জীবনকে বাজি রেখে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল | আর তখন থেকেই এড়িয়ে যেতে থাকে সুতপা। ছোট থেকেই শৃঙ্খলার মধ্যে বড় হয়েছে সুশান্ত। বাবাকে ভীষণ ভয় করত। সুতপার মা এক সময় সুশান্ত ও সুতপার সম্পর্কের কথা জেনে যান | তখন সুশান্তের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সকলের সামনে হুমকি দিয়ে আসেন।’’ যদিও সুশান্তের সঙ্গে সুতপার শেষ দিকের ‘সম্পর্ক’ নিয়ে তিনি কিছু জানতেন না বলেই দাবি করছেন ওই যুবক | প্রসঙ্গত, ২ মে সন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজারে রাস্তার উপর বার বার ছুরির আঘাতে সুতপাকে খুন করে সুশান্ত | পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাণঘাতী হামলার পর সুতপাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়| কিন্তু প্রচন্ড রক্ত বেরোনোর কারণে তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি | এর পরেই অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নেয় বহরমপুর পুলিশ। কিন্তু বর্তমানে তার মতিগতি যে স্বাভাবিক নয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে তারা |