Breaking News

রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া হাওড়ার জগাছায়!স্ত্রীর পচাগলা দেহ আগলে মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী

দেবরীনা মণ্ডল সাহা, কলকাতা :-রুটিন সার্ভে করছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীরা। জগাছার নন্দীপাড়া এলাকার একটি বাড়ির দরজার কাছে আসতেই ঘটল বিপত্তি। ঝাঁঝালো দুর্গন্ধ নাকে আসা শুরু হল উপস্থিত সবারই। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই নজরে এল মর্মান্তিক দৃশ্য। মৃত স্ত্রীর পচাগলা দেহ আগলে বসে রয়েছেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ তুষার চক্রবর্তী। মৃতা তপতী দেবী(৬৭) কতদিন আগে মারা গিয়েছেন তার হিসেব নেই। কিন্তু তবু সেই খবর ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কেউ। আজ স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা সার্ভে করতে না এলে হয়তো এভাবেই অনাবিষ্কৃত অবস্থায় পড়ে থাকত তপতী চক্রবর্তীর মৃতদেহ।

অসুস্থ বৃদ্ধকে ভরতি করা হয়েছে হাওড়া হাসপাতালে। ঘটনা ঘিরে শোরগোল নন্দীপাড়া এলাকায়। বৃদ্ধের এই দেহ আগলে বসে থাকার ঘটনায় অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে, ৮ বছর আগে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ড। যেখানে দিদির দেহ এভাবেই আগলে বসেছিল মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই।পাড়া-প্রতিবেশীরাও হয়তো জানতে পারতেন না। এভাবেই জগাছার নন্দীপাড়া হয়ে উঠত আরএক রবিনসন স্ট্রিট। জগাছার এই ঘটনা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বর্তমান সমাজের দুর্দশা। জানা গিয়েছে, তুষার বাবু সামান্য মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁর ও তপতী দেবীর একমাত্র মেয়ে বিবাহিত। তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে মুম্বইয়ে থাকেন। দম্পতি জগাছার ওই বাড়িতে একাই থাকতেন।কিছুটা দূরে থাকতেন তুষারবাবুর ভাই নীহারকান্তি চক্রবর্তী। তিনি দাদা-বউদির খোঁজখবর রাখতেন। এরই মাঝে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও ভরতি হয়েছিলেন তপতীদেবী। পরে বাড়ি ফিরলেও প্রায় শয্যাশায়ী ছিলেন।তিন, চারদিন আগে নীহারকান্তিবাবু এসেছিলেন দাদার বাড়ি। দরজা ধাক্কা দিয়েও সাড়া না পেয়ে ফিরে যান। তারপর ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। তারপর শনিবার সকালে বউদির মৃত্যুসংবাদ পান তিনি। এদিন সকালে নন্দীপাড়ায় সমীক্ষার কাজ করতে গিয়েছিলেন হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরা চক্রবর্তী বাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে, ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন। প্রতিবেশীরা জানান, কয়েকদিন ধরে তাঁরা এই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন। জগাছা থানার পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখেন, ঘরের মধ্যে তপতীদেবীর মৃতদেহ পড়ে, তার পাশে বসে তুষারবাবু।পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। বৃদ্ধ অসুস্থ তুষার চক্রবর্তীকে হাওড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তুষারবাবুর ভাই নীহারকান্তি চক্রবর্তী থাকেন কিছুটা দূরে। তিনি জানান, দাদার বাড়ি এসেছিলেন কয়েকদিন আগে। কিন্তু দাদা-বউদি কারও সাড়া পাননি। ফলে ফিরে যান। তারপর ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *