প্রসেনজিৎ ধর, কলকাতা :- গোপাল দলপতির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নমিনি হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। বড়বাজারের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে আরমান নামে অ্যাকাউন্ট খোলেন গোপাল দলপতি। আর সেখানে হৈমন্তীকে নমিনি করেছিলেন গোপাল দলপতি ওরফে আরমান। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টের নমিনি ছিলেন হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় বলে তদন্তকারী সংস্থার দাবি।সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে গোপলের সঙ্গে হৈমন্তীর পরিচয়ের সূত্র ধরে সম্পত্তি কিনতে শুরু করেন দু’জন। ওই সময় থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকা গোপাল দলপতির কাছে আসতে শুরু করে। আর তখন থেকেই শুরু হয় সম্পত্তি কেনার পালা। ২০১৫ সালে গোপাল শুধু নতুন সংস্থা খোলার জন্য ও নিত্যনতুন সম্পত্তি কিনতেই নিজের নাম পরিবর্তন করে হন আরমান গঙ্গোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও সিবিআইয়ের কাছে আসা খবর অনুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জেলায় নামে ও বেনামে প্রায় ২০০ বিঘা জমি ও কোথাও জমির উপর বাড়িও রয়েছে। বীরভূমে রয়েছে দু’জনের হোটেল ও গেস্ট হাউজ। হাওড়ায় বাপের বাড়ি ছাড়াও টালিগঞ্জের অদূরে বেহালার মুচিপাড়ার কাছে রাজা রামমোহন রায় রোডে একটি ফ্ল্যাটের হদিশ মিলেছে।সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, মুম্বইয়ের নরিম্যান পয়েন্টে একটি অফিসের সন্ধান মিলেছে। ওই অফিসটি মুম্বইয়ের এক ব্যবসায়ীর হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল হৈমন্তীর। হৈমন্তী প্রায়ই মুম্বই যেতেন। ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে গোপাল ও হৈমন্তীর ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল বলে তদন্তকারীদের ধারণা। কারণ, গোপালের অ্যাকাউন্ট থেকে যে ৬৮ লাখ টাকা মুম্বইয়ের ওই সংস্থায় সম্প্রতি গিয়েছে, সেই তথ্য এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। এ ছাড়াও হৈমন্তী অ্যাগ্রোটেক নামে বিবাদি বাগের একটি সংস্থার মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকা পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ সিবিআইয়ের।ইডি তদন্তে নেমে তথ্য পেয়েছে, বড়বাজারে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে এই টাকা রাখার জন্য অ্যাকাউন্ট খোলেন গোপাল।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত অ্যাকাউন্টের নমিনি ছিলেন হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। এমনকী কেন্দ্রীয় বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনে রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিসের নথিতে উল্লেখ আছে একটি কোম্পানির নাম— হৈমন্তী অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে তৈরি হওয়া এই কোম্পানির ডিরেক্টর পদে দু’জন রয়েছেন। প্রথম নাম হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের। আর দ্বিতীয় নাম গোপাল দলপতির। অফিসের ঠিকানা ডালহৌসি। ইডির দাবি, তাঁরা বিয়ে করে টালিগঞ্জে ফ্ল্যাট কিনে থাকতেন। গোপালের অবশ্য এটি দ্বিতীয় বিয়ে। গোপালের সঙ্গে পরিচয়ের পর রকেটের গতিতে উত্থান হয় হৈমন্তীর। শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে টলিউডে জায়গা করেন তিনি। অভিনয় করেন ‘অচেনা উত্তম’, ‘জাল’ এবং ‘আনটোল্ড’ নামে তিনটি ছবিতে। নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় সিনেমা প্রযোজনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন হৈমন্তী। এই বিপুল অর্থের উৎস সন্ধানে নেমেছেন তদন্তকারীরা।