প্রসেনজিৎ ধর, কলকাতা :- শুরু হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করেছেন। সেখানে জার্মানি এবার থিম কান্ট্রি। ৪৮তম কলকাতা বইমেলায় অবশ্য মুক্তমনাদের ক্ষেত্রে দুঃখের খবর রয়েছে। একদিকে আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা, অপরদিকে বাংলাদেশের জ্বলন্ত পরিস্থিতি— এই দুই ঘটনা নিয়ে বইমেলার মুক্তমঞ্চে সোচ্চার হবেন ভেবেছিলেন মুক্তমনারা। অর্থাৎ যাঁরা মুক্ত মনে নিজের মতামত যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ–সহ তুলে ধরে বিতর্কে অংশ নেন। কিন্তু এবার কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় রাখাই হল না মুক্তমঞ্চ।উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের দাবি, বইমেলা প্রাঙ্গণে যে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতেই এ বার তৈরি করতে দেওয়া হয়নি মুক্তমঞ্চ। ভবিষ্যতেও এই সিদ্ধান্তের বদল হবে না, কারণ বইমেলা বিক্ষোভ-বিপ্লবের জায়গা নয়। তবে অনুষ্ঠানের জন্য বিকল্প একটি ঘেরা মঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ও হতাশ বইপ্রেমীদের একাংশ। বিশেষত, লিটল ম্যাগাজিন বা ছোট প্রকাশনা সংস্থার কর্মীরা।
গিল্ডের এমন পদক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির চেয়েও আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে রাজ্যের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়ার বিষয়টি বেশি স্পর্শকাতর। এখনও সেই ঘটনার রেশ কাটেনি। তা ছাড়া, আর জি কর-কাণ্ডে বিচার চেয়ে গত বছর সাধারণ মানুষ যেমন পথে নেমেছিলেন, তেমনই বহু সৃষ্টিশীল মানুষ নিজেদের লেখনীতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে সে সব রচনা প্রকাশ পেয়েছে। তাই প্রশাসনের সমালোচনা করে বইমেলার মুক্তমঞ্চে তেমন রচনা পাঠ বা গান গাওয়া হলে সমস্যায় পড়তে পারেন মেলার উদ্যোক্তারা এমনই ধারণা অনেকের।এই বইমেলায় বরাবরই মুক্তমঞ্চে সর্বদা মুক্ত চিন্তা এবং মুক্ত মতামত ব্যক্ত করা হয়। এই মঞ্চ থেকে এমন কিছু হোক যা উত্তপ্ত বাতাবরণ তৈরি করে তা চায়নি গিল্ড কর্তৃপক্ষ। এই মুক্তমঞ্চের ভাড়া কম। তাই ছোট ছোট দল বা লিটল ম্যাগাজিনের লোকজন নানা সময়ে সেই মঞ্চ ভাড়া নিয়ে অনুষ্ঠান করে থাকেন। কিন্তু এখন যে নতুন ঘেরা মঞ্চ তৈরি হয়েছে সেটার ভাড়া তিন হাজার টাকা। তাই অনেকেই বইমেলায় অনুষ্ঠান করতে চাপে পড়বেন। আর পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড মনে করছে, মুক্ত চিন্তা প্রকাশের অছিলায় অনেকেই বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করেন। যার জেরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পুলিশকে হস্তক্ষেপের করতে হয়। এই বিষয়ে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, ‘স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে বই লিখুন, বিক্রি করুন, সমস্যা নেই। কিন্তু বইমেলা প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। বইমেলা বই কেনা, বই পড়ার জায়গা।’
