প্রসেনজিৎ ধর, কলকাতা :- ময়নাতদন্তের যে প্রাথমিক রিপোর্ট এসেছে তাতে ট্যাংরায় তিনজন খুন হয়েছেন এটা স্পষ্ট। তবে এখনও একাধিক প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর মিলছে না। ট্যাংরা অটল শূর রোডের বাড়ির সামনের এক সিসিটিভি ফুটেজে পরিবারের তিন সদস্যকে (দুই ভাই এবং নাবালক) বেরতে দেখা গেছিল। তবে বাড়ির আর কোনও সিসিটিভি থেকে তথ্য পাচ্ছে না পুলিশ। কারণ সেগুলি নাকি ‘নিষ্ক্রিয়’ করা ছিল।
ট্যাংরা কাণ্ডের শুরুতেই জানা গিয়েছিল, দে পরিবার অত্যন্ত ধনী ছিলেন। একাধিক ব্য়বসা, প্রাসাদপম বাড়ি, কী ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর নেপথ্যে কারণ হিসেবে ঋণের বোঝা উঠে আসতেই একাধিক প্রশ্ন দানা বাঁধে তদন্তকারীদের মনে। তাতেই জানা গিয়েছে, প্রসূন ও প্রণয়ের বাবার আমলে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল চামড়ার ব্যবসা। পরবর্তীতে তা দুইভাইয়ের হাতে আসে। তারপর থেকেই দেখা দেয় মন্দা। ব্যবসায় লাভ কমতে থাকে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে লোকসানের পরিমাণ। তা সত্ত্বেও জীবনযাত্রায় কোনও পরিবর্তন করেননি প্রসূন ও প্রণয়। একটা সময়ের পর ঋণের টাকায় শখ পূরণ করেছেন। গতবছর দুইভাই স্ত্রীদের জন্য দুটি ফরচুনার গাড়ি কিনেছেন। বহুবার বিদেশেও গেছেন। তার জেরেই একটা সময়ে দেনায় দায়ে জড়িয়ে পড়েন দুইভাই।ট্যাংরার ‘চিত্তনিবাস’-এর বাইরের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছিল, গাড়ির সামনে উঠে বসেছিল নাবালক। দুর্ঘটনার আগে সে জায়গা বদলও করেনি। পুলিশ সূত্রে খবর, বয়ানে দুই ভাই জানিয়েছে, আত্মহত্যার জন্য অনেক আগেই তাঁরা মনস্থির করে ফেলেছিল। তাই পিলারে ধাক্কা মারার আগে নাবালককে তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেছিল। কিন্তু সে কথা শোনেনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রণয় এবং প্রসূন দুজনেই স্থিতিশীল রয়েছেন। তবে একটু হলেও সঙ্কটজনক ওই নাবালক। শুক্রবার ওই বাড়িতে যান ময়নাতদন্তের সঙ্গে যুক্ত ফরেন্সিক মেডিসিন দলের সদস্যরা। মনে করা হয়েছিল, বাড়ির সিসিটিভি ক্যামরাগুলির ফুটেজ খতিয়ে দেখলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বাড়ির প্রত্যেকটি সিসিটিভিই বন্ধ বা অকেজো| আর এখান থেকেই অনুমান করা যাচ্ছে,এটা শুধুমাত্র ‘ট্রিপল মার্ডার’ নয়, আদতে ঠান্ডা মাথায় পরিরল্পনা করেই এই খুনগুলি করা হয়েছে।কারণ, দিন কয়েক আগেই বাড়ির সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরা কেউ বা কারা বন্ধ করে রেখে দিয়েছিল? তাহলে কি বাড়ির দুই কর্তা প্রণয় বা প্রসূনই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন? নাকি এর নেপথ্য রয়েছে অন্য কোনও রহস্য? তাছাড়া, বাড়ির সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ ‘পাসওয়ার্ড’ দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে বলেও দাবি সূত্রের। ফলত, সারা বাড়িতে গোটা বিশেক সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও তার ফুটেজ তদন্তকারীরা এখনও দেখতে পাননি। সেই ফুটেজ যাতে দ্রুত দেখা সম্ভব হয়, সেই চেষ্টা করছে পুলিশ।
