Breaking News

শুধু কালো ধোঁয়া!দাউ দাউ করে জ্বলছিল হোটেল, পাঁচতলার কার্নিশে দু’ঘণ্টা অপেক্ষা দম্পতির

দেবরীনা মণ্ডল সাহা, কলকাতা :- ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বড়বাজারের হোটেলে। একেবারে হাড়হিম করা ঘটনা। ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেলেন একের পর এক পর্যটক। ভিনরাজ্যের অনেকেই বাংলায় এসে উঠেছিলেন ওই হোটেলে। কিন্তু মঙ্গলবারের আগুন লাগার পরে কার্যত গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয় গোটা হোটেল।পাঁচতলার ঘরের দরজা খুলে স্বামী এবং ১৫ বছরের ভাইপোর সঙ্গে বার হতে গিয়েছিলেন নেহা। করিডর তত ক্ষণে ভরে গিয়েছে কালো ধোঁয়ায়। অগত্যা ঘরে ঢুকে শৌচালয়ের জানলার কাচ ভেঙে তিন জন নেমে দাঁড়ান পাঁচতলার কার্নিসে। নেহা জানিয়েছেন, প্রায় দু’ঘণ্টা কার্নিসে দাঁড়িয়েই কেটেছিল তাঁদের। তার পরে দমকল এসে উদ্ধার করে তিন জনকে।নেহা ওড়িশার বাসিন্দা। সম্প্রতি তাঁর দুই সন্তান এবং ভাইয়ের দুই সন্তানের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাই সকলকে নিয়ে কলকাতা বেড়াতে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্বামী আকাশ আগরওয়াল। ২৬ এপ্রিল কলকাতায় এসে উঠেছিলেন বড়বাজারের মেছুয়ার ফলপট্টির ওই হোটেলে। পাঁচতলায় দু’টি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন ছ’জন। ইডেনে আইপিএলের ম্যাচও দেখতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতেই ওড়িশায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল নেহাদের। চেকআউট করার সময় এলে হোটেলের একটি ঘর ছেড়ে নীচে নেমে যান নেহার দুই পুত্র এবং এক ভাইপো। তখনও পাঁচতলার ৪০৫ নম্বর ঘরে ছিলেন নেহা, স্বামী আকাশ এবং ভাইপো লোকেশ আগরওয়াল। ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে সময়ই নেহাকে ফোন করেন তাঁর দুই সন্তান, যাঁরা তত ক্ষণে পাঁচ তলা থেকে নীচে নেমে গিয়েছিলেন।হোটেলে দাউ দাউ করে আগুন। তার সঙ্গেই কালো ধোঁয়ায় চারদিক ভরে যায়। বের হওয়ার জন্য় একটাই সিঁড়ি। সেখান দিয়ে নামতে গেলে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারে। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরপরই কোনওভাবে কার্নিশে নেমে আসেন ওই দম্পতি। যেকোনও সময় বড় দুর্ঘটনা হতে পারত। কিন্তু কার্নিশে নামা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পথও ছিল না।নেহার স্বামী আকাশ বলেন, ‘‘৩০ সেকেন্ডের জন্য মৃত্যু দেখেছিলাম।’’ নেহা জানিয়েছেন, গ্রিল ধরে তিন জন কার্নিসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তত ক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে দমকলবাহিনী। কিন্তু হোটেলের কার্নিসে দাঁড়িয়ে থাকা তিন জনকে দেখতে পাননি কর্মীরা। শেষে মোবাইলের টর্চ জ্বালান নেহা। তাতেই নজর পড়ে দমকলবাহিনীর। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে তাঁদের পাঁচতলার কার্নিস থেকে উদ্ধার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডে একেবারে মৃত্যু মিছিল। আগুন থেকে বাঁচতে কয়েকজন ঝাঁপও দিতে শুরু করেছিলেন। একের পর এক মৃত্যু বাড়তে থাকে। বড়বাজারের ওই হোটেল কার্যত জতুগৃহ হয়ে গিয়েছিল।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *